সফল হতে চাইলে এই কাজগুলো করুন

 

সফল হবার জন্য যেসব অভ্যাস বাদ দেওয়া দরকার

সফল হওয়ার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা থাকলেই কি একজন মানুষ সফল হতে পারে? উত্তরটা হচ্ছে, না। লাইফস্টাইল, অভ্যাস পরিবর্তন ও সেজন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়া এখানে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। সফল হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করাকে, সফল হওয়ার পথে প্রথম ধাপ বলতে পারেন।

ভাল অভ্যাস যেমন আপনাকে সফল হতে আরো তৈরি করতে পারে, কাজটি সহজ করে দিতে পারে, তেমনি নেতিবাচক অভ্যাসগুলিই আপনার অর্জনের পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ নিজের সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করার জন্য আমাদের যে শুধু নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হয় তা না, অনেক নেতিবাচক বা আমাদের জন্য ক্ষতিকর অভ্যাস ত্যাগও এর মধ্যে পড়ে।

নিজের সাফল্যকে প্রাধান্য দিতে যে অভ্যাসগুলি বাদ দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।

.

# অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল 

সফল হতে সুস্থ থাকা জরুরি। স্বাস্থ্যকর ও রুটিনমাফিক খাওয়া-দাওয়া, লাইফস্টাইল ও নিয়মিত শরীরচর্চা শুধু আপনার এখনকার স্বাস্থ্যের বিষয় নয়, ভবিষ্যতেও এটা আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে। 

ভাল একটা ডায়েট মেইনটেইন করুন আর প্রতিদিন অন্তত ১৫ বার স্ট্রেচিং ও ঘাম ঝরে এমন ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এক্সারসাইজ আমাদের মন ভাল রাখতেও সাহায্য করে, কারণ এক্সারসাইজ করলে আমাদের শরীরে ‘Feel Good’ হরমোন নামে পরিচিত হরমোনের একটা অর্থাৎ ‘এন্ডোরফিন’ তৈরি হয়। যা আমাদের মধ্যে আনন্দ ও সুখের অনুভূতি তৈরি করে। 

ডায়েট করা বলতে আমরা অনেকে মনে করি না-খেয়ে ওজন কমানোকে বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু ডায়েট অর্থ আসলে ‘খাদ্যাভ্যাস’। আপনার শরীরের পুষ্টি চাহিদা অনুসারে একটা ভাল ডায়েট  প্ল্যান তৈরি করে নিন। যদি শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকে, তাহলে ডায়েটে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। একবার একটা ডায়েটে অভ্যস্ত হতে পারলে তাতেই পুরোদমে অ্যাক্টিভ থাকা সম্ভব। প্রয়োজন হলে একজন পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।

.

# শর্ট-টার্ম চিন্তা করা

পরিকল্পনাগুলি হওয়া দরকার দীর্ঘমেয়াদী। আর সেই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করতে থাকতে হয়। শুধু কোনো পুরস্কার পাওয়া বা কাউকে খুশি করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করলে দিনশেষে নিজের সাফল্য খুঁজতে গিয়ে হতাশই হতে হবে আপনাকে। 

ব্যাপারটাকে এভাবে দেখুন—শুধু ওজন কমানোর জন্য ব্যয়াম না করে বরং ব্যায়ামকে লাইফস্টাইলের অংশ করে তোলার জন্য ব্যায়াম করাটা অনেক বেশি কার্যকরী। একই সাথে, কোনো লক্ষ্য যদি আপনার কাছে অনেক বড় মনে হয়, তারপরও ভয়ে পিছিয়ে আসা ঠিক না। ব্যর্থ হওয়ার ভয় থেকে লক্ষ্যের পরিসর ছোট করতে থাকলে একসময় এ সকল কাজের পেছনে থাকা উদ্দেশ্যই ভুলে যাবেন আপনি।

.

# একমুখী মাইন্ডসেট

যে ক্ষেত্রে সফল হবার জন্য কাজ করছেন, কেবল সে ক্ষেত্রেই নিজের স্কিল ডেভেলপ করবেন—এমন চিন্তা থেকে সরে আসুন। কারণ বিভিন্ন রকমের স্কিল ডেভেলপ করার পাশাপাশি যারা নতুন নতুন উপায়ে সেগুলি কাজে লাগাতে পারে, তাদেরই সফল হবার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া নতুন দক্ষতা নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করে। তা আপনারই কাজে আসবে।

.

# সবকিছু নিঁখুত ভাবে করার চেষ্টা

বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই আপনাকে খুঁতখুতে হতে হয়, তা ঠিক। কিন্তু তাই বলে কোনো কাজের জন্য স্থান, কাল ও পাত্র একদম পারফেক্টলি ম্যাচ করবে এটা ভেবে বসে থাকলে আপনি কখনোই সামনের দিকে আগাতে পারবেন না। মনে রাখুন, ব্যর্থতাকে ভয় করা এবং সফলতাকে ভয় পাওয়া একই কথা।

.

# মাল্টি-টাস্কিং

খেয়াল রাখতে হবে, আপনার লক্ষ্যগুলি যেন এতটা বৈচিত্র্যময় না হয়ে ওঠে যে দিনশেষে আপনি কোনো কিছুতেই দক্ষ হতে পারলেন না। যেকোনো একটা ক্ষেত্র বেছে নিন আর সেখানে নিজের সবটুকু দিয়ে লেগে পড়ুন। হতে পারে সেটা নতুন একটা বিজনেস আইডিয়া, কারো সাথে গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলাপ অথবা নতুন কোনো ডায়েট প্ল্যান—যেকোনো কাজ করার সময় শুধু সেদিকেই আপনার পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ ও প্রচেষ্টা রাখার চেষ্টা করুন ।

.

# সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা 

সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, থাকবেও না। যেসব জিনিস সরাসরি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে আর যেগুলি থাকে না—এ দুইয়ের মাঝে পার্থক্য করে নিন। তারপর সেই অনুযায়ী কাজ ভাগ করুন। হতে পারে একসময় বুঝতে পারলেন, একমাত্র যে জিনিসটা সবসময় আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে সেটা হল, যেকোনো ঘটনার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া। কাজেই সব রকমের পরিস্থিতিতে নিজের প্রতিক্রিয়া পুরোদমে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।

.

# লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত না এমন সব জিনিসকে "হ্যাঁ" বলা

সফল ব্যক্তিরা জানেন, লক্ষ্য অর্জন করতে বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও কলিগদের এমন অনেক কাজ, টাস্ক ও ডিমান্ডকে "না" বলতে হয় যেগুলি তাদের উদ্দেশ্য সাধনে কোনো কাজে আসে না। এতে করে সাময়িক মনোমালিন্য‌ও দেখা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনার সাফল্য এ সবকিছুকে সার্থক করে তুলবে। যখন আপনি দেখতে পাবেন ঠিক কোন জিনিসটির জন্য আপনি এত ত্যাগ ও পরিশ্রম করেছেন। যারা আপনাকে ভালবাসে, তারা ঠিকই তখন বুঝতে পারবে।

.

# ‘ভুল’ মানুষদের সাথে সময় কাটানো

আমরা যাদের সাথে সময় কাটাই, একটা নির্দিষ্ট সময় পর তাদের প্রবণতাগুলি আমাদের মধ্যে চলে আসে। শুরুতে টের না পেলেও আপনার চারপাশে যখন সফল ও অনুপ্রাণিত মানুষেরা থাকবে, আস্তে আস্তে তাদের ‘পজেটিভ’ চিন্তা ও কিছু করার দৃঢ় ইচ্ছা আপনার মধ্যেও কাজ করবে।

.

# পিপল প্লিজিং বা সবাইকে খুশি করতে চাওয়া

মনোযোগ নষ্ট হওয়ার পেছনে বড় কারণগুলির একটা এটা। তাছাড়া সবার মনের মত হতে চেয়ে এমন সব অভ্যাস দিয়ে আপনার ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে, যা আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবে না। বরং মানুষ হিসেবে আপনি আরো ভীরু ও দুর্বল চিত্তের হয়ে পড়বেন। কে কখন আপনাকে পছন্দ করছে না, এই ভাবনা আপনার শান্তি নষ্ট করবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পিপল প্লিজিং থেকে সরে আসুন।

.

# সোশ্যাল মিডিয়ায় পড়ে থাকা

আপনার কাজ যদি সোশ্যাল মিডিয়া-কেন্দ্রিক হয় তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কিন্তু বিনোদনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়াটা বিপজ্জনক। কারণ অন্যান্য বিনোদনের মাধ্যম—যেমন বই পড়া, সিনেমা দেখা, গল্প করা, ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদির সাথে এর পার্থক্যটা হল—এখানে আপনার কাটানো সময়টাকেই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম নিজেদের বিজনেস সোর্স হিসাবে ব্যবহার করে। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক কিছু শুধু আপনার সময় নষ্ট করার করার জন্যই বানানো, যার মাধ্যমে প্রোডাক্টিভ কিছু পাওয়া যায় না।

কিন্তু সফল হতে চাওয়া মানুষদের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান।

#সাফল্য #অভ্যাস #লাইফস্টাইল